ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ট্রাস্কফোর্স কমিটির ত্রৈমাসিক  সভা অনুষ্ঠিত মনোনয়ন না পেয়ে যা বললেন রুমিন ফারহানা ভেড়ামারায় মাদক প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বোয়ালমারীতে ভীমরুলের কামড়ে শিশুর মৃত্যু  কুষ্টিয়া-১ আসনে মনোনয়ন পেয়ে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বাচ্চু মোল্লা লক্ষ্মীপুরে তওহীদ ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে ছাত্রদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত মান্দায় সার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ আর কি দখল মুক্ত হবে? বোয়ালমারী চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি ঘোড়াঘাটে হিজড়া থাকলেও ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের ক্যাটাগরি শূন্য নির্বাচন বানচালকারীদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে — অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম

অসহায় নারীরা স্যানেটারী ন্যাপকিন তৈরী করে এখন স্বাবলম্বি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সমাজের অসহায় নারীরা তৈরী করছেন স্যানেটারী ন্যাপকিন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সমাজের অসহায় নারীরা তৈরী করছেন স্যানেটারী ন্যাপকিন।


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সমাজের অসহায় নারীরা তৈরী করছেন স্যানেটারী ন্যাপকিন। মোট ১৭ জন নারী স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন তৈরী করছেন। এতে ফিরে এসেছে তাদের সাংসারিক স্বচ্ছলতা। এ সমস্ত হতদরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে ওয়েল সার্জিক্যাল ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড।

কালীগঞ্জের বাকুলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ওয়েল সার্জিক্যাল এ- কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় কাজ করেন। তারা প্রশিক্ষন নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে তৈরী করছেন সার্জিক্যাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত কটন, গজ, ব্যানডেজ, প্যাড, সিজার বেল্ট, মাথা ব্যথায় ব্যবহৃত কোর সেট বেল্ট, গলার বেল্ট, আর্ম সেলিং ব্যান্ডেজসহ মানবদেহের বাহ্যিক চিকিৎসা সংক্রান্ত ১৪ প্রকার জিনিসপত্র।

অসহায় জীবনের গল্প শোনালেন রাজিয়া, রুনা আকতার, পলি, রোজিনা আকতার ,পলি বেগম, সাকিলা আকতার, ময়না খাতুন, পিংকি রানী দাস, সোনিয়া আকতার, মাছুদা খাতুন, লিপি খাতুন, রুমি খাতুন, স্বপ্না, বিজলীসহ জীবনযুদ্ধে শামিল হওয়া অসহায় ১৭ জন নারী। যারা এখন সকলেই সাংসারিক ভাবে স্বাবলম্বি।

মেয়েরা কেউ বিভিন্ন প্রকার বেল্টের কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ তৈরীকৃত জিসিপত্রের প্যাকিং করছেন। অন্যদিকে কেউ ঘুরে ঘুরে কাজ তদারকি করছেন। আবার তৈরীকৃত মাল বাজারজাত করতে কার্টুন ভরে নিয়ে যাচ্ছেন মার্কেটিংয়ে নিয়োগ প্রাপ্তরা। ফলে সবাই যেন নিজ নিজ কাজে মহাব্যস্ত। কথা হয় এখানে কর্মরত বিজলী খাতুনের সাথে তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার স্বামী মারা গেছে। স্বামীর সংসারে তেমন কিছুই নেই।

তার একটা ছেলে রয়েছে। এতোদিন ভ্যানচালক বাবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে ছিলেন। এরপর এখানে কাজ পেয়ে যা বেতন পাচ্ছেন তা দিয়ে এখন চলতে পারছেন। তিনি বলেন, এতোদিন হতাশার মধ্যে দিন কাটতো। এখন অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে ছেলেটা মানুষ করার মত একটা পথ খুঁজে পেয়েছেন। রোজিনা খাতুন জানান, সারা বছর সাংসারিক অভাব অনাটনের মধ্যদিয়ে জীবন চলতো। এখানে কাজ পেয়ে প্রতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।

যা দিয়ে তার সংসার চলছে। বাঁচতে পারছেন আত্ম সম্মান নিয়ে। সাকিলা খাতুন জানান, এখানে যারা কাজ পেয়েছেন তারা সকলেই অসহায় হতদরিদ্র আগে তাদের মত মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকাসহ দেশের দুরদুরান্তের গামেণ্টসসহ বিভিন্ন কলকারখানায় যেতে হতো। কিন্তু এখন সংখ্যায় কম হলেও তারা বেশ কিছু মহিলা বাড়ি থেকে এসে এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন।

তিনি জানান,এখানে যারা কাজ করেন তাদের কাজ খুব প্রয়োজন ছিল। তারা সকলেই মনে করেন কোম্পানি টিকে থাকলে তাদের কাজ থাকবে। ফলে তারা নিজেদের সংসারের কাজের মত যতœশীলভাবে কাজ করেন। আলেয়া বেগম জানান, সমাজে তার মত অসহায় মেয়েদের সংখ্যা কম নয়।

কিন্তু শত অভাব অনাটনের মধ্যেও অনেকে কাজ করতে এলাকা ছেড়ে দুরে কোথাও যেতে পারেন না। যে কারণে সরকারী উদ্যোগে অথবা বিত্তবান লোকেরা যদি এমন মফস্বল পর্যায়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তাহলে অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান হবে। তাদেরকে অন্যের ঘাড়ের বোঝা হতে হবে না। এ প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার বাহারুল ইসলাম জানান, তাদের এখানে কাজ করা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই সমাজের অসহায় নারী।

এ সকল জিনিস তৈরীতে পূর্বে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদের কে এ চিকিৎসা সামগ্রী তৈরীর জন্য ঢাকা থেকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু লাভবান হওয়ার চিন্তায় তাদের নেই। তাদের লক্ষ্য এ এলাকার অসহায় মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ট্রাস্কফোর্স কমিটির ত্রৈমাসিক  সভা অনুষ্ঠিত

অসহায় নারীরা স্যানেটারী ন্যাপকিন তৈরী করে এখন স্বাবলম্বি

আপডেট টাইম : ১১:৫৪:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সমাজের অসহায় নারীরা তৈরী করছেন স্যানেটারী ন্যাপকিন।


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সমাজের অসহায় নারীরা তৈরী করছেন স্যানেটারী ন্যাপকিন। মোট ১৭ জন নারী স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন তৈরী করছেন। এতে ফিরে এসেছে তাদের সাংসারিক স্বচ্ছলতা। এ সমস্ত হতদরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে ওয়েল সার্জিক্যাল ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড।

কালীগঞ্জের বাকুলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ওয়েল সার্জিক্যাল এ- কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় কাজ করেন। তারা প্রশিক্ষন নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে তৈরী করছেন সার্জিক্যাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত কটন, গজ, ব্যানডেজ, প্যাড, সিজার বেল্ট, মাথা ব্যথায় ব্যবহৃত কোর সেট বেল্ট, গলার বেল্ট, আর্ম সেলিং ব্যান্ডেজসহ মানবদেহের বাহ্যিক চিকিৎসা সংক্রান্ত ১৪ প্রকার জিনিসপত্র।

অসহায় জীবনের গল্প শোনালেন রাজিয়া, রুনা আকতার, পলি, রোজিনা আকতার ,পলি বেগম, সাকিলা আকতার, ময়না খাতুন, পিংকি রানী দাস, সোনিয়া আকতার, মাছুদা খাতুন, লিপি খাতুন, রুমি খাতুন, স্বপ্না, বিজলীসহ জীবনযুদ্ধে শামিল হওয়া অসহায় ১৭ জন নারী। যারা এখন সকলেই সাংসারিক ভাবে স্বাবলম্বি।

মেয়েরা কেউ বিভিন্ন প্রকার বেল্টের কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ তৈরীকৃত জিসিপত্রের প্যাকিং করছেন। অন্যদিকে কেউ ঘুরে ঘুরে কাজ তদারকি করছেন। আবার তৈরীকৃত মাল বাজারজাত করতে কার্টুন ভরে নিয়ে যাচ্ছেন মার্কেটিংয়ে নিয়োগ প্রাপ্তরা। ফলে সবাই যেন নিজ নিজ কাজে মহাব্যস্ত। কথা হয় এখানে কর্মরত বিজলী খাতুনের সাথে তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার স্বামী মারা গেছে। স্বামীর সংসারে তেমন কিছুই নেই।

তার একটা ছেলে রয়েছে। এতোদিন ভ্যানচালক বাবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে ছিলেন। এরপর এখানে কাজ পেয়ে যা বেতন পাচ্ছেন তা দিয়ে এখন চলতে পারছেন। তিনি বলেন, এতোদিন হতাশার মধ্যে দিন কাটতো। এখন অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে ছেলেটা মানুষ করার মত একটা পথ খুঁজে পেয়েছেন। রোজিনা খাতুন জানান, সারা বছর সাংসারিক অভাব অনাটনের মধ্যদিয়ে জীবন চলতো। এখানে কাজ পেয়ে প্রতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।

যা দিয়ে তার সংসার চলছে। বাঁচতে পারছেন আত্ম সম্মান নিয়ে। সাকিলা খাতুন জানান, এখানে যারা কাজ পেয়েছেন তারা সকলেই অসহায় হতদরিদ্র আগে তাদের মত মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকাসহ দেশের দুরদুরান্তের গামেণ্টসসহ বিভিন্ন কলকারখানায় যেতে হতো। কিন্তু এখন সংখ্যায় কম হলেও তারা বেশ কিছু মহিলা বাড়ি থেকে এসে এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন।

তিনি জানান,এখানে যারা কাজ করেন তাদের কাজ খুব প্রয়োজন ছিল। তারা সকলেই মনে করেন কোম্পানি টিকে থাকলে তাদের কাজ থাকবে। ফলে তারা নিজেদের সংসারের কাজের মত যতœশীলভাবে কাজ করেন। আলেয়া বেগম জানান, সমাজে তার মত অসহায় মেয়েদের সংখ্যা কম নয়।

কিন্তু শত অভাব অনাটনের মধ্যেও অনেকে কাজ করতে এলাকা ছেড়ে দুরে কোথাও যেতে পারেন না। যে কারণে সরকারী উদ্যোগে অথবা বিত্তবান লোকেরা যদি এমন মফস্বল পর্যায়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তাহলে অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান হবে। তাদেরকে অন্যের ঘাড়ের বোঝা হতে হবে না। এ প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার বাহারুল ইসলাম জানান, তাদের এখানে কাজ করা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই সমাজের অসহায় নারী।

এ সকল জিনিস তৈরীতে পূর্বে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদের কে এ চিকিৎসা সামগ্রী তৈরীর জন্য ঢাকা থেকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু লাভবান হওয়ার চিন্তায় তাদের নেই। তাদের লক্ষ্য এ এলাকার অসহায় মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।