নাগরপুর প্রতিনিধি : জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্নের বান। একটি উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কি কি সেবা মেলে তা নিয়েও আছে জনমনে ক্ষোভের পাহাড়। গতকাল, এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন উপজেলার বেশ কয়েজন সংবাদ কর্মী। সড়ক দুর্ঘটনায় গত সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় মোবকান ইউনিয়নের কেদারপুর শেখ হাসিনা সেতুর পূর্ব পাশে গুরুতর আহত হন রাজমিস্ত্রী শ্রমিক আশিক। নাগরপুরের সংবাদকর্মী ইউসুফ হোসেন লেলিন ও তার সাথে থাকা সহকর্মী এবং পথচারীরা দূর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাত্ক্ষণিক আহত ব্যক্তিকে নাগরপুর সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও তার পরিচিত নিশ্চিত হয়ে আহতের পরিবারকে ঘটনা জানায়। গতকালকের সেই মুমূর্ষু রোগীর সঠিক সুচিকিৎসায় নানা রকম বিঘ্ন ঘটে। এসবের ধারাবাহিক কিছু তুলে ধরা হলো সকলের উদ্দেশ্য। আহতকে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় রাত ৮ টার কিছু আগে। চিকিৎসা শুরুর আগে সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ প্রয়োজন হলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করতে পারেনি জরুরি বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও সাথে সাথে জরুরি অক্সিজেন মেলেনি এবং পালস অক্সিমিটার না থাকায় পরবর্তীতে শরীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন না মেপেই অক্সিজেন দেওয়া হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর শুরু হয় চিকিৎসা, হাতে গ্লাভস বা দস্তানা না পরেই ইনফেকশনের ঝুঁকি নিয়েই চলে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে ড্রেসিং এবং ব্যথানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ। উল্লেখ্য, জরুরি এসব ইনজেকশন ও আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রায় সকল সময়ই থাকে না। কিন্তু পুরোপুরি ড্রেসিং শেষ না করেই শরীরে স্যালাইন প্রবেশের জন্য ক্যানোলা লাগাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। স্যালাইন প্রয়োগের সময় আহত রোগীর হাতে থাকা ধাতব হাত ঘড়ি দৃশ্যমান ছিল এবং রোগী ব্যথায় ছটফট করছি। ধাতব হাতঘড়িটি অপসারণ কি জরুরি ছিলো না? এইসব বিষয় দূর থেকেই অবলোকন করেন জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ইশরাত জাহান ইমা। শেষ পর্যন্ত ক্যানোলা লাগাতে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে রোগীকে তাড়াহুড়ো করে জেলা সদরে রেফার্ড (স্থানান্তর) করা হয়। এদিকে চোখের উপরে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছিল রোগীর। এ সময় রোগীর গোংরানি, ছটফটানি থামানোর মত নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপে, সেখানে একজন ডাক্তার, একজন ব্রাদার ছাড়া, ছিলোনা হাসপালের ৩য় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি। এভাবেই প্রায় ৪০ মিনিট স্ট্রেচারে কাতরাচ্ছেন রোগী, অপেক্ষা করা হচ্ছে স্বজনদের জন্য। গুরুতর আহত আশিকের আর্তনাদ দেখে স্থানীয় বাসিন্দা এগিয়ে গিয়ে দায়িত্বে থাকা ডা. ইশরাত জাহান ইমা’ কে অনুরোধ করেন, রক্ত প্রবাহ বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার এবং প্রয়োজনে সিনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়া। ডা. ইমা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা না করে মুঠোফোনে উল্টো বিরক্তির অভিযোগ করে বসেন থানা স্বাস্থ্য অফিসার বরাবর। পরবর্তীতে স্বজনরা এম্বুলেন্স নিয়ে রোগীকে নিতে আসলে তখন সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ একজন সিনিয়র ডাক্তার চলে এসে রোগীর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে পুনরায় ড্রেসিং করেন এবং রক্ত প্রবাহ বন্ধে তাৎক্ষণিক সেলাই করার উদ্যোগ নেন। ইতিমধ্যে সময় প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে। হাসপাতাল রেজিস্ট্রার অনুযায়ী রোগীকে আহত অবস্থায় আনা হয় রাত ৮ টায় এবং এম্বুলেন্সে রোগী বাহির হয় ৯ টা ১০ মিনিটে। রোগীকে নিয়ে টাঙ্গাইল হাসপাতালে যাওয়ার আগেই রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরবর্তীতে জানা যায়, রোগীর নাক, মুখে রক্ত গিয়ে জমাট বেঁধে নিশ্বাস বাঁধা প্রাপ্ত হয় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই হয়তো তার এমন মৃত্যু হয় তার। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, উপজেলার একমাত্র এই সরকারি হাসপাতালে মূলত প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিন হলো। গুরুতর রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা না দিয়ে যত্রতত্র রেফার্ড করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অভাবে জীবনের ঝুঁকিতেও পড়ছে রোগীরা। এছাড়াও হাসপাতালের আশেপাশে যত্রতত্র গড়ে উঠা ক্লিনিকের এজেন্টরা জরুরি রোগী আসলেই দল বেধে ভিড় করে জরুরি বিভাগে এবং চিকিৎসা কার্য ব্যহত করে। এসব ক্লিনিক বা ডায়াগনেষ্টিং সেন্টারের মোট সংখ্যা কত এবং অনুমোদন সহ যথাযথ নির্দেশনা মানা হয় কি না এটাও জনগণের প্রশ্নের বাইরে নয়। রোগী চলে যাওয়ার পর সাংবাদিকরা জরুরি বিভাগে তথ্য নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইশরাত জাহান ইমা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তিনি তার নাম বলতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয় ডা. রোকনুজ্জামান, তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অনুমতি সাপেক্ষে তথ্য নিতে পারবেন। চিকিৎসা সেবা সঠিক ভাবেই চলছে। রোগীর স্বজনদের আসতে দেরি হওয়ায় সময় লেগেছে। যথাসময়েই সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একটি হাসপাতালের এবং এর জরুরি বিভাগের অত্যাবশ্যকীয় কিছু সেবার মানদণ্ডে কি কি সেবা থাকা উচিত এবং মানদণ্ড অনুযায়ী সকল স্বাস্থ্য সেবা নাগরপুর সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রদান করা হয় কি না বিষয়টি অধিকাংশের অজানা। এলাকাবাসী এই বিষয় গুলো জানানর প্রবল আগ্রহ পোষণ করে।