বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধানে ছত্রাক ও মাজরা পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষকরা
মোহাম্মদ আককাস আলী :
বরেন্দ্র অঞ্চলে রোপা আমন ধানের মৌসুমে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, ব্লাস্ট ও খোলপচা জাতীয় ক্ষতিকর ছত্রাকের দ্বিমুখী আক্রমণে জেলার বিস্তৃত ধানক্ষেত এখন ফসলশূন্য হওয়ার পথে। ধান কেটে ঘরে তোলার মাত্র কয়েক দিন আগে ফসলের এমন পরিণতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক। বিঘা প্রতি সাত-আট হাজার টাকা খরচ করেও ফলন না পাওয়ায় ঋণের বোঝায় বিপর্যস্ত তাঁরা।
১১টি উপজেলার মধ্যে সদর, মহাদেবপুর, মান্দা, আত্রাই, নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা এবং রাণীনগরের বিভিন্ন মাঠে রোগ ও পোকার আক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় মাঠের ধান পেকে সোনালি হয়ে গেছে। কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায়, ধানগাছগুলো হলুদ হয়ে শুকিয়ে খড়ে পরিণত হয়েছে এবং শীষগুলো চিটা পড়ে সাদা হয়ে গেছে। ধানের গোড়ায় পচন ও পাতায় ছত্রাকের ব্যাপক দাগ দৃশ্যমান।
বাচারী গ্রামের কৃষক হামিদুল জানান,”পাঁচবার ওষুধ দিয়েও পোকা ও ছত্রাককে বাগে আনা যায়নি। বিঘা প্রতি সাত-আট হাজার টাকা খরচ করে এখন মাঠের ধান খড় হয়ে যাচ্ছে। মহাজনের ঋণ কী দিয়ে শোধ করব, জানি না।”
ঈশ্বর পুর গ্রামের সিদ্দিক পাঞ্জু সরদার,মাসুদ রানা জানান,”ধান কাটার সময় হয়ে এলো, অথচ ক্ষেতের ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। কোন কীটনাশকই কাজ করছে না।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সময়মতো পাশে পাওয়া যায়নি। ফলে কীটনাশক বিক্রেতাদের মনগড়া পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করেও ফল মেলেনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। তবে দেরিতে বৃষ্টি শুরু হওয়া এবং এরপর তীব্র গরম ও অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে রোগবালাই বেড়েছে।
কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোছা. হোমায়রা মন্ডল জানান, “এবারের অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। বিশেষ করে মাজরা পোকা ও ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করে কৃষকদের সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় অনুমোদিত বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে কৃষকদের যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার না করে কৃষি অফিসের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও সঠিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে। আমরা ফলন বিপর্যয়ের মাত্রা কমাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক 


















