দৌলতপুরে সহিংসতার পর গ্রামবাসীর আর্তনাদ: “সব হারিয়ে এখন সেনা টহল চাই”
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাগোয়ান কান্দিরপাড়া গ্রামটি এখন একরকম নীরব মৃত্যুপল্লি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সর্দার বংশের সারফান সর্দার (৫০)কে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বাঁশবাগানে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা, পাল্টা হামলা আর লুটপাট। একের পর এক অভিযোগের তীর এবার গিয়ে ঠেকেছে মন্ডল বংশের মানুষের দিকে—তারা বলছেন, “আমরা আর টিকতে পারছি না, সেনা টহল ছাড়া নিরাপদ নই।”
গ্রামজুড়ে এখন আতঙ্ক আর শূন্যতা।
মন্ডল বংশের ঘরবাড়িগুলো তালাবদ্ধ, পুরুষরা পলাতক। নারীরা সন্তান নিয়ে লুকিয়ে আছেন আত্মীয়ের বাড়ি বা দূর গ্রামের আশ্রয়ে। তাদের অভিযোগ—হত্যাকাণ্ডের পর সর্দার, বিশ্বাস ও মুন্সি বংশ একজোট হয়ে মন্ডল পরিবারগুলোর ওপর নির্বিচারে হামলা, লুটপাট ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
“আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, মাঠে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারে না,” বলেন ভুক্তভোগী এক নারী। “যে গ্রাম একসময় শান্ত ছিল, সেখানে এখন কেবল ধোঁয়ার গন্ধ।”
গত এক মাসে একের পর এক সহিংস ঘটনার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে—
৯ সেপ্টেম্বর সোহেল ও সাদ্দাম মন্ডলের বাড়ি লুট করে গরু নিয়ে যাওয়া হয়;
১৭ সেপ্টেম্বর মিলন মন্ডলের মায়ের কাছ থেকে মরিচ ছিনিয়ে নেওয়া, হাপি মন্ডলের পান বিক্রির টাকা ছিনতাই;
১৮ সেপ্টেম্বর কামাল মন্ডলের জমির ঘাস কেটে নিয়ে যাওয়া ও মারধর;
২৫ সেপ্টেম্বর রমজান মন্ডলের পান ভাঙা;
১ অক্টোবর জানু, সামাজুল ও আকরাম মন্ডলের বাড়িতে লুটপাট;
২ অক্টোবর মকলেস মন্ডলের দোকান বন্ধ করে দেওয়া;
৩ অক্টোবর হাবু মন্ডলের পান বরজে ভাঙচুর এবং একই দিনে ধানখেতের সেচের স্যালো মেশিন চুরি।
গ্রামবাসীর দাবি, এর বাইরেও ঘটেছে আরও বহু লুটপাট ও হামলার ঘটনা, যার কোনো প্রতিকার তারা পাননি।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মন্ডল বংশের কেউ আর নিজেদের ঘরে ফিরতে পারছেন না। তাদের জীবিকা—কৃষি, পানচাষ, গবাদিপশু—সব কিছু এখন ধ্বংসের মুখে। স্কুলছাত্রীরা বাড়িতে বন্দি, যুবকেরা পলাতক।
অভিযোগের আঙুল উঠেছে পুলিশের দিকেও।
সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর শামীম মুসা বলেন, “যদি হত্যার সময় ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকত, তাহলে পরবর্তী এই সহিংসতা ঘটতো না।”
মন্ডল বংশের লোকজন অভিযোগ করেন—“আমরা থানায় গিয়েছি, লিখিত জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।”অবশেষে তারা আশ্রয় নিয়েছেন সেনা ক্যাম্পে।
দৌলতপুর সেনা ক্যাম্পে লিখিত আবেদন জানিয়ে গ্রামবাসী তদন্ত, নিরাপত্তা, টহল ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের কথায়, “সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা নিরাপদ নই।”
অন্যদিকে, সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন,
“এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হত্যার পর থেকেই পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে, নিয়মিত টহলও চলছে। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।