1. zillu.akash@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@dailynewsbangla.com : Daily NewsBangla : Daily NewsBangla
গোদাগাড়ীর রফিকুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হলেও ধরা হয়নি আসামী - dailynewsbangla
শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
সিন্ডিকেটের বেড়াজালে বন্দি বরেন্দ্রঞ্চলের ফুলকপি চাষিরা  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নোতি পেলেন শিবগঞ্জের ইউএনও বগুড়ায় ১০ দিনব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন মহাদেবপুরে হতদরিদ্র শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করলেন পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন রাজশাহীতে বিয়ের দাবীতে প্রেমিকা উপস্থিত বিয়ের অনুষ্ঠানে দাম ভালো পাওয়ায় মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুকেছে বরেন্দ্রঞ্চলের চাষীরা  গাঁজাসহ এক  মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ  মানব উন্নয়ন সংস্থার পরিচালকের আত্মহত্যা  বরেন্দ্রঞ্চলে কারেন্ট পোকায় জামাই সোহাগা আতপ ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষীরা  পুলিশ সদস্য ভাইয়ের পক্ষে বোনের সাংবাদিক সম্মেলন

গোদাগাড়ীর রফিকুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হলেও ধরা হয়নি আসামী

ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪

গোদাগাড়ীর রফিকুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হলেও ধরা হয়নি আসামী

 

রাজশাহী ব্যুরো: আকাশটা বিকাল থেকে মেঘলা ছিল, সন্ধ্যায় শরু হয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। গোদাগাড়ী থানা পুলিশের কাছে পাক্কা খবর ছিল হিরোইনের একটি বড় চালান নদী পার হবে। রাত ৮ টার মধ্যে বৃষ্টি থেমে আকাশ পরিষ্কার হলো। নদী পাড়ে (গোদাগাড়ী দেওয়ান পাড়া চর) ওঁত পেতে আছে পুলিশের টিম। পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ জামাল নামের একজন হিরোইন পাচারকারিকে আবিষ্কার করলো এবং ১০০ গ্রাম হিরোইনের মামলা দিল। কিন্তু জামালের সাথে আসা আরেক পাচারকারি রফিকুল নেই! এরপর খোঁজাখুঁজি করে গোদাগাড়ীর দেওয়ান পাড়া চরে বালুর উপর রফিকুলের মরদেহ উদ্ধার করলো পুলিশ। খবর ছড়িয়ে গেল রফিকুলের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু একজন মানুষের বজ্রপাতে মৃত্যু হলে তার যে সুরতহাল যা হওয়ার কথা তার কোনটাই ছিল না! রফিকুলের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন, হাতে পায়ে ফ্যাকচার (ভাঙ্গা)। তবুও থানার তৎকালীন ওসি এটিকে অপমৃত্যু বলে প্রচার করে রফিকুলের স্ত্রী রোমিসা বেগমের থেকে একটি মুচলেকা নেয় এবং তাকে হত্যা মামলা করতে ভয়ভীতি দেখায়। রোমিসা বেগম কি করবে বুঝে উঠতে পারেনি। অবশ্য সেসময় তাকে মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বিবেকের কাছে পরাজিত হয়ে অবশেষে তিন মাস পর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে রোমিসা। যার গোদাগাড়ী থানার মামলা নাম্বার-২৮, জিআর নাম্বার-২৩৭। এরপর নানা নাটকীয়তা শেষে গোদাগাড়ীর সেই আলোচিত রফিকুল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হলেও আসামীদের গ্রেফতারে অনীহা পুলিশের। এদিকে রফিকুল হত্যাকান্ডের সাথে পুলিশের সক্রিয়তা আছে বলে নিশ্চিত করেছে মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী ইসাহাক আলী ওরফে ইসাহাক ল্যাংড়া। এছাড়াও ঐ দিনের সেই ঘটনায় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও সোর্স জড়িত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। এতকিছুর পরও মামলার এজাহার নামীয় আসামীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এমনকি হত্যাকারিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতেও কালক্ষেপন করছে মামলাটির তদন্তকারি সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। এতে চরম হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার। স্থানীয়দের দাবী ঘটনার ৪ বছর হয়ে গেলেও একজন আসামীকেও ধরেনি পুলিশ। অথচ এই হত্যাকারিদের ব্যাপারে সব কিছুই এখন ওপেন সিক্রিট। কারা ছিল, কি ঘটেছিল, সেদিন কোন কোন পুলিশ ছিল, রফিকুলকে কে ডেকে এনেছিল, সেদিন হিরোইন কত কেজি ছিল, হিরোইন কে পাঠিয়েছিল সব কিছু সকলের জানা। তবুও পুলিশ কেন নিশ্চুপ? এমন প্রশ্নের অনুসন্ধান নেমেছে মিডিয়াকর্মী। একটি সূত্র অভিযোগ তুলেছে সেই হত্যাকান্ডের সাথে রুহুল চৌকিদার, শরিফুল, জামাল, ইসাহাক, পিয়ারুল ও কয়েকজন ইউপি মেম্বার জড়িত আছে। সেই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, এই এলাকার যত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে, তারা সবাই রুহুল চৌকিদারের কথার বাইরে যেতে পারতো না। চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) হওয়ার সুবাদে প্রশাসনের সাথে সহজে মিশতো এবং প্রশাসনে নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়মিত মাশোহারা তুলতো। হত্যাকান্ড ও মাদক সিন্ডিকেট নিয়ে বিস্তারিত আগামী তুলে ধরা হবে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২১ মার্চ রাতে গোদাগাড়ী দেওয়ানপাড়া চরে রফিকুল ইসলাম(৩০) নামের এক মাদক বহনকারির মৃত্যু হয়। পরে এঘটনায় পুলিশ রফিকুলের মৃত্যুকে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে বলে অপপ্রচার করে এবং সেদিনের ঘটনার মোড় ঘুরাতে জামাল নামের একজনকে ১০০ গ্রাম হিরোইনের মামলা দেওয়া হয়। মৃত: রফিকুল চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার কোদালকাটি (গাইনাপাড়া) গ্রামের ফজলুর রহমান মৌলভী’র ছেলে। এঘটনা রফিকুলের স্ত্রী রোমিসা বেগমের থেকে একটি মুচলেকা নিয়ে মরদেহটি পোস্টমর্টেমের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর খাইরুল ইসলাম। এরপর মরদেহটির সুরতহাল দেখে রফিকুলের পরিবার বুঝতে পারে এটি অপমৃত্যু নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। অবশেষে ১৭ জুন স্ত্রী রোমেসা বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যাকান্ডের মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে তদন্তের জন্য দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে। এরপর মামলাটির প্রথম তদন্ত শুরু করেন এসআই জামাল উদ্দিন। তদন্তের শুরুতে রফিকুলের সিডিআর পর্যালোচনা করে ইসাহাক আলী ওরফে ইসা (২৯) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। ইসা মাদারপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে। গ্রেফতারের পর ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল মাহমুদের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় ইসা। ঐ জবানবন্দিতে বলা হয় পাঁচ পুলিশের হাতে খুন হয়েছে রফিকুল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত রফিকুল মুলত হেরোইন বহনকারি ছিলেন। ঘটনার রাতে রফিকুলের কাছে ৩০ কেজির উর্ধ্বে হিরোইন ছিল বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। সেদিনের সেই হিরোইন ইন্ডিয়ার কাশেম নামের কোন এক ব্যবসায়ী পাঠিয়েছিল বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সেই হিরোইনের বস্তা প্রথম নামে মামলার এজাহার নামীয় আসামী শরিফুলের বাড়িতে। নিহত রফিকুলের বাড়ি থেকে শরিফুল ডেকে নিয়ে আসে হিরোইন পারাপারের জন্য। সেখান থেকে হিরোইনের বস্তাটি রফিকুলের মাধ্যমে পদ্মানদী পার হয়ে আরেক ব্যবসায়ীর বাড়িতে নামানোর কথা ছিল। রফিকুলের সাথে ছিল কোদালকাঠি (জেলেপাড়া) গ্রামের আজাদের ছেলে জামাল উদ্দিন। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ঘটনার রাতে রফিকুল ও জামাল সেই হেরোইন নিয়ে আসছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ রফিকুলের উপর টর্চার করলে সেখানেই রফিকুল মারা যান। এরপর পুলিশ তার লাশ ফেলে রেখে চলে আসে এবং নাটক সাজিয়ে সেখান থেকে জামালকে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার ব্যাপারে বাদী রোমেসা বেগমের সাথে কথা বললে সে জানায়, আমার মামলা করা প্রায় ৪ বছর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আসামী ধরেনি পুলিশ। আমরা আসামী দেখিয়ে দিয়েছি তবুও ধরেনি। কারন পুলিশ তাদের থেকে উৎকোচ নিয়েছে। বর্তমান তদন্তকারি অফিসার এসআই খাইরুলকে বললে সে বলেছে, আসামী ধরতে টাকা লাগবে। আমাদের টাকা নাই তাই মামলা এভাবে পড়ে আছে। কবে শুনবো এই খারিজ করেছে আদালত। কারন গরীবের বিচার নাই!! আল্লাহ এর বিচার করবে!!! নাটকীয় এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে গোদাগাড়ী থানার তৎকালীন ওসি খাইরুল ইসলামের সাথে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে যোগাযোগ করলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এই মামলার কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবো না। পারলে আপনার কাছে কি তথ্য আছে দেন? আমরা বসে নেই, মামলাটির তদন্ত চলছে। আসামী কেন ধরছেন না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, চরের ঐ এলাকা খুব দুর্গম ও খারাপ, তাই সেখানে পুলিশের যাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যায়। এরপর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুল ইসলাম (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদন্নতি প্রাপ্ত) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, পিবিআই সব সময় নিরপ্রেক্ষভাবে তদন্ত করে। এখানে কারো সুপারিশ করার সুযোগ নাই। মামলার তথ্য প্রমানের কারনে অনেক সময় লেনদি হয়। এখানে মামলা নিয়ে অবহেলার কোন সুযোগ নাই। আপনারা গণমাধ্যমকর্মী আছেন, আশাকরি আপনাদের লিখনির মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করবেন। অপরাধি যেই হোক, কোন ছাড় পাবেনা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ