রাজশাহী ব্যুরো: “প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রাজশাহীতে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা করা হয়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হয়ে চত্বরটি প্রদক্ষিণ করে। দিবসটির লেখা সম্বলিত ক্যাপ মাথায় নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা র্যালিতে অংশ নেন। র্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
আলোচনা সভার সভাপতি ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা নিয়ে আমরা বর্তমানে উল্টো পথে চলছি। আগে আমাদের শিক্ষা অর্জন তারপর প্রযুক্তি। অথচ বর্তমানে শিক্ষার পূর্বে প্রযুক্তির দিকে ঝুকছে সবাই। আমরা ডিগ্রীর ঝুড়ি ভর্তি করছি কিন্তু এই শিক্ষা জাতির জন্য বেশি শুভকর নয়। তাই শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা ও প্রযুক্তির সাথে থাকতে হবে। সাক্ষরতা আজকের দিনের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলোর দ্বারা যেমন অন্ধকার দূর হয়, তেমনি শিক্ষার দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ, জাতির মধ্যে থেকে কুসংস্কার ও অসভ্যের অন্ধকার দূর হয়। শিক্ষা ও সাক্ষরতা ছাড়া কোনো জাতি টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। বর্তমান সরকার সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিভিন্ন সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। নিরক্ষতা দূরীকরণের সরকার সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অশিক্ষা দূরীকরণে কাজ করতে হবে।”
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মো: রায়হানুর রহমান। তিনি বলেন, “শুধু পড়া-লেখা জানলেই সাক্ষর নয়, বরং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনমান উন্নয়নে দক্ষ হওয়াই প্রকৃত সাক্ষরতার বহিঃপ্রকাশ। তাই প্রত্যেককে সচেতনভাবে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে হবে।” একসময় সাক্ষরতা বলতে আমরা কেবল পড়তে ও লিখতে পারা কি বুঝতাম। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে সাক্ষরতার সংজ্ঞা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রযুক্তির এই যুগে সাক্ষরতার নতুন মাত্রাগুলো :-
ডিজিটাল সাক্ষরতা: কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা।
তথ্য স্বাক্ষরতা:বিশ্বাস্য তথ্য খুঁজে বের করা ও যাচাই করার ক্ষমতা।
মিডিয়া স্বাক্ষরতা : বিভিন্ন মাধ্যমের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা।
আর্থিক স্বাক্ষর: ডিজিটাল ব্যাংকিং ও অনলাইন লেনদেনের জ্ঞান রাখা।
সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা শিক্ষা অফিসার আ: ওয়াহাব, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন, কারিতাস রাজশাহী আঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড.অরোক টপ্য, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবা খাতুন, রিভারভিউ কালেক্টরেট রাজশাহীর শিক্ষার্থী। আলোচনা সভায় তারা বলেন, শিক্ষা শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নের হাতিয়ার নয়, এটি একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে।
উক্ত আলোচনা সভায় বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজনটির সার্বিক বাস্তবায়ন করেছে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, রাজশাহী দপ্তর।