ঢাকা ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
নির্বাচনের মাধ্যমেই জাতির ভাগ্যের ফয়সালা হবে উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ট্রাস্কফোর্স কমিটির ত্রৈমাসিক  সভা অনুষ্ঠিত মনোনয়ন না পেয়ে যা বললেন রুমিন ফারহানা ভেড়ামারায় মাদক প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বোয়ালমারীতে ভীমরুলের কামড়ে শিশুর মৃত্যু  কুষ্টিয়া-১ আসনে মনোনয়ন পেয়ে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বাচ্চু মোল্লা লক্ষ্মীপুরে তওহীদ ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে ছাত্রদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত মান্দায় সার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ আর কি দখল মুক্ত হবে? বোয়ালমারী চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি ঘোড়াঘাটে হিজড়া থাকলেও ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের ক্যাটাগরি শূন্য

ওরা লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

ফাইল ছবি

এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটছেন। নানা পেশার, নানা বয়সী মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন লাল-সবুজের পতাকা। তাদের পথচলায় বর্ণিল হয়ে ওঠেছে পথ-ঘাট। মাইলের পর মাইল হেঁটে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন জাতীয় পতাকা। এ যেন আত্মার টান। বিজয়ের নিশানের ফেরিওয়ালা ওরা। চারদিকে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালাদের পথচলায় উড়ছে বিজয়ের নিশান।

বিজয়ের উল্লাস চারদিকে। মহান বিজয় দিবস উদযাপনে দেশজুড়ে অপেক্ষা। লাল-সবুজের পতাকা উড়বে দেশের আনাচে-কানাচে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িতেও দেখা যাবে বিজয় নিশান -বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। বিজয়ের মাস এলেই শহর-নগরের পথে ঘাটে ফেরিওয়ালারা পতাকা বিক্রি করেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি মৌসুমী পেশা হিসেবে বেছে নেন তারা।

রাজধানীর ধানিমন্ডি এলাকায় বাঁশের লাঠির সঙ্গে বিভিন্ন মাপের লাল-সবুজের পতাকা বেঁধে ট্রাফিক সিগন্যালে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছিলেন মনিরুল ইসলাম। বয়সে তরুণ। গাজীপুরে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। কিন্তু বিজয়ের মাসে রাজধানীতে এসে উঠেছেন একটি মেসে। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলি গলি ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে কাপড়ের দোকানে কাজ করি কিন্তু প্রতি বছরই ছুটি নিয়ে বিজয়ের মাসে ঢাকায় পতাকা বিক্রি করি। এ মৌসুমী ব্যবসা আমার মত অনেকেই করে। গাজীপুর থেকে বিভিন্ন মাপের পতাকা বানিয়ে এনেছি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পতাকাগুলো বিক্রি করব।

তিনি বলেন, এ মাসে প্রাইভেটকার, পথচারী, রিকশাওয়ালাসহ সবাই পতাকা কিনেন। বিজয়ের মাসকে সম্মান দেখাতে সবাই পতাকা কেনায় এ মৌসুমী ব্যবসা খুবই লাভজনক। তাই প্রতি বছরই এ মাসে ঢাকায় আসি। এবারও আমরা গাজীপুর থেকে ৫ জন এসেছি।

 

ধানমন্ডি ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি প্রাইভেটকার থেকে পতাকা কিনছিলেন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, আমার নাতির জন্য পতাকাটা কিনলাম। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত স্বাধীনতার সূর্যের উত্তাপ নিতে পারেনি। বিশ্বের মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজের স্থান দখল করে বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা। বিজয় ছিল আনন্দ, উল্লাস ও গৌরবের। সঙ্গে আপনজনকে হারানোর বেদনা, কান্না। নাতিকে বিজয়ের অনুভূতি সম্পর্কে জানতেই এ পতাকা কিনলাম।

রাজধানীর মিরপুরে শেওড়াপাড়া এলাকায় পতাকা বিক্রি করছিলেন হামিদুর রহমান। পেশায় রিকশাচালক হলেও ডিসেম্বরের শুরু থেকে পতাকা বিক্রি করছেন তিনি। হামিদুর রহমান বলেন, বছর জুড়ে রিকশা চালাই কিন্তু বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি করি। এটা বেশ লাভজনক ব্যবসাও। এ ছাড়া খুব কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, তাই বিজয়ের পতাকা ফেরি করে বিক্রি করতে এক ধরনের গর্ববোধও হয়।

বড় পতাকার চেয়ে ছোট পতাকার চাহিদা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, একেবারে ছোট পতাকা ১০ টাকা থেকে শুরু হয়ে মাপ অনুযায়ী ৩০, ৫০, ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পতাকা বিক্রি করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক বহন করে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। সরকারি, বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ির ছাদে, প্রাইভেটকার, পরিবহন, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ডিসেম্বরের পুরো মাস জুড়ে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা। সেই চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন সাইজের পতাকার পসরা সাজিয়ে তারাও ঘুরছেন পথে পথে। বিজয়ের মাস এলেই পতাকা হাতে দেখা মেলে ওদের। ওরা লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা।

Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনের মাধ্যমেই জাতির ভাগ্যের ফয়সালা হবে

ওরা লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

আপডেট টাইম : ০৬:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটছেন। নানা পেশার, নানা বয়সী মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন লাল-সবুজের পতাকা। তাদের পথচলায় বর্ণিল হয়ে ওঠেছে পথ-ঘাট। মাইলের পর মাইল হেঁটে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন জাতীয় পতাকা। এ যেন আত্মার টান। বিজয়ের নিশানের ফেরিওয়ালা ওরা। চারদিকে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালাদের পথচলায় উড়ছে বিজয়ের নিশান।

বিজয়ের উল্লাস চারদিকে। মহান বিজয় দিবস উদযাপনে দেশজুড়ে অপেক্ষা। লাল-সবুজের পতাকা উড়বে দেশের আনাচে-কানাচে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িতেও দেখা যাবে বিজয় নিশান -বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। বিজয়ের মাস এলেই শহর-নগরের পথে ঘাটে ফেরিওয়ালারা পতাকা বিক্রি করেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি মৌসুমী পেশা হিসেবে বেছে নেন তারা।

রাজধানীর ধানিমন্ডি এলাকায় বাঁশের লাঠির সঙ্গে বিভিন্ন মাপের লাল-সবুজের পতাকা বেঁধে ট্রাফিক সিগন্যালে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছিলেন মনিরুল ইসলাম। বয়সে তরুণ। গাজীপুরে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। কিন্তু বিজয়ের মাসে রাজধানীতে এসে উঠেছেন একটি মেসে। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলি গলি ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে কাপড়ের দোকানে কাজ করি কিন্তু প্রতি বছরই ছুটি নিয়ে বিজয়ের মাসে ঢাকায় পতাকা বিক্রি করি। এ মৌসুমী ব্যবসা আমার মত অনেকেই করে। গাজীপুর থেকে বিভিন্ন মাপের পতাকা বানিয়ে এনেছি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পতাকাগুলো বিক্রি করব।

তিনি বলেন, এ মাসে প্রাইভেটকার, পথচারী, রিকশাওয়ালাসহ সবাই পতাকা কিনেন। বিজয়ের মাসকে সম্মান দেখাতে সবাই পতাকা কেনায় এ মৌসুমী ব্যবসা খুবই লাভজনক। তাই প্রতি বছরই এ মাসে ঢাকায় আসি। এবারও আমরা গাজীপুর থেকে ৫ জন এসেছি।

 

ধানমন্ডি ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি প্রাইভেটকার থেকে পতাকা কিনছিলেন অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, আমার নাতির জন্য পতাকাটা কিনলাম। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত স্বাধীনতার সূর্যের উত্তাপ নিতে পারেনি। বিশ্বের মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজের স্থান দখল করে বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা। বিজয় ছিল আনন্দ, উল্লাস ও গৌরবের। সঙ্গে আপনজনকে হারানোর বেদনা, কান্না। নাতিকে বিজয়ের অনুভূতি সম্পর্কে জানতেই এ পতাকা কিনলাম।

রাজধানীর মিরপুরে শেওড়াপাড়া এলাকায় পতাকা বিক্রি করছিলেন হামিদুর রহমান। পেশায় রিকশাচালক হলেও ডিসেম্বরের শুরু থেকে পতাকা বিক্রি করছেন তিনি। হামিদুর রহমান বলেন, বছর জুড়ে রিকশা চালাই কিন্তু বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি করি। এটা বেশ লাভজনক ব্যবসাও। এ ছাড়া খুব কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, তাই বিজয়ের পতাকা ফেরি করে বিক্রি করতে এক ধরনের গর্ববোধও হয়।

বড় পতাকার চেয়ে ছোট পতাকার চাহিদা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, একেবারে ছোট পতাকা ১০ টাকা থেকে শুরু হয়ে মাপ অনুযায়ী ৩০, ৫০, ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পতাকা বিক্রি করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক বহন করে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। সরকারি, বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ির ছাদে, প্রাইভেটকার, পরিবহন, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ডিসেম্বরের পুরো মাস জুড়ে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা। সেই চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন সাইজের পতাকার পসরা সাজিয়ে তারাও ঘুরছেন পথে পথে। বিজয়ের মাস এলেই পতাকা হাতে দেখা মেলে ওদের। ওরা লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা।