রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: কেউ কথা রাখেনি। ৩ বছর ৬ মাস প্রতিক্ষায় আছি, কেউ কথা রাখেনি। এই প্রতিক্ষা প্রখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে প্রতিক্ষা নয়। এই প্রতিক্ষা একটি মেডিকেল কলেজের জন্য প্রতিক্ষা। নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রকল্পের ফাইল দীর্ঘদিন যাবৎ লাল ফিতায় বন্দি রয়েছে। তৎকালীন রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন মেডিকেল সেখানে কলেজ স্থাপনের। পরিপত্র জারি করার উল্লেখিত সময় অতিবাহিত হলেও নেই কোন দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ।
এমনকি প্রকল্প কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও জানেন না যে তাকে সদস্য করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে শংসয় সৃষ্টি হয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের এপ্রিলে রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় সারাদেশে রেলওয়ের অব্যবহৃত জমি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহারে বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। লোকসানে থাকা রেলওয়ের অব্যবহৃত জমিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইন্সটিটিউট, তারকা হোটেল ও শপিংমল প্রতিষ্ঠায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
রেলওয়ে উন্নয়ন কর্মসূচীতে তালিকাভুক্ত এসব প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর আওতায় বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই প্রকল্পের আলোকেই সৈয়দপুরে একটি রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৭ সালে তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রণালয় নুরুল ইসলাম সুজন সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনে এসে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ দ্রæত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি দেন।
দীর্ঘ এক বছর পর ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে রেলওয়ের মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে গঠন করা হয় চার সদস্য বিশিষ্ট প্রকল্প কমিটি। রেলওয়ের মহাপরিচালক দপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকৌশলী) মোঃ সেলিম রউফ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে কমিটির প্রধান করা হয় রেল ভবনের পরিচালক প্রকৌশলীকে।
প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্ব দেয়া হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা (কারখানা) কে। কমিটির সদস্য করা হয় বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দপুর, বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা পাকশী ও বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা পাকশীকে। ওই পরিপত্রে বলা হয়, রেলওয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপে সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালকে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজে উন্নতি করাসহ ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল করা।
পিপিপি’র আওতায় ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে বেসরকারী বিনিয়োগের সম্ভাব্য অর্থ বরাদ্দ ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা। এর বাদ বাকি ব্যায়ের অর্থায়ন করবে রেলওয়ে। পরিপত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দ্রæত কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয় গঠিত প্রকল্প কমিটিকে। যা কমিটির সদস্যদের চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি সভাও করা হয়নি। এমনকি কমিটির করণীয় সুপারিশ সম্পর্কেও পরবর্তীতে আলাদা কোন চিঠি দেয়া হয়নি।
ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে অন্ধকারে আছেন কমিটির সদস্যরা। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা মোখছেদুল মোমিন জানান, রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি আমলে নিয়ে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প সরকার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি।
ফোকাল পয়েন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা (কারখানা) জয়দুল ইসলাম বলেন, পিপিপি প্রকল্প ইতোমধ্যে আমাকে কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই এ সংক্রান্ত কাগজ হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে রেলওয়ে ভবনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক সভা করা হবে।