রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: জাগো রোজাদার…। ‘জাগো জাগো রোজাদার জাগো, সাহরির সময় হয়েছে, আঁখি মেলে দেখ। রমজানের এই রোজার শেষে আসবে খুশির ঈদ’ মুখে ইসলামিক গজল আর কবিতার শ্লোক।
টর্চ, লাঠি, চার্জার বা ব্যাটারির আলো হাতে বেশ কয়েকজন লোক। এঁরা ভোর রাতে গান গেয়ে রোজাদারদের জাগিয়ে তুলছেন। এমন চিত্র নীলফামারীর সৈয়দপুরে। আর যাঁরা এভাবে জাগিয়ে তুলছেন তারা পরিচিত ‘কাফেলা’ বা ‘রাত জাগানিয়ার দল’ নামে। রমজান মাস জুড়েই এমন দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা।
ডিজিটাল এই যুগেও এ উপজেলায় এমন কাফেলা দলের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। আগে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় একাধিক কাফেলার দল থাকলেও কালের বিবর্তণে সংখ্যায় এখন অনেক কম। তবে এখনো পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডেই কাফেলা দলের দেখা মেলে।
প্রতিটি দলে সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে ৫ জন। রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত সাহরির (রোজা শুরুর আগে প্রাতরাশ) জন্য প্রতিদিন রাত দুইটার দিকে তাঁরা নেমে পড়েন রোজাদারদের ডেকে তোলার কাজে। রাত জেগে এভাবে ডেকে তোলা তাঁদের কাছে পরম পুণ্যের কাজ। অনেকে আবার একে সামাজিক দায়িত্ব বলেও মনে করেন।
দলের প্রবীণ সদস্যদের অনেকের অনুমান, এক সময়ে ঘড়ির প্রচলন ছিল না। সে কারণে রোজদারদের সাহরির অসুবিধা হত। সেই সময় থেকে এ কাজ শুরু হয়। মূলত কিশোরদেরই এই কাজ করতে দেখা যায়। খুব কম দলই আছে যেখানে এখনও বয়স্করা এই কাজ করছেন। এতে ঈদের আগে এলাকার মানুষ খুশি হয়ে দু’চার টাকা করে দেন দলের সদস্যদের।
ওই টাকায় ঈদের আগে পরিবারের জন্য নতুন কাপড় কিনেন তারা। জাগানদারদের পরনে লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, পাজামা এবং টুপি। প্রতি দলে এমন একজন থাকেন, যাঁর কাজ বাকিদের সকলকে ডেকে এক জায়গায় জড়ো করা। আলো ফোটার আগে ঘুম থেকে উঠে এই কাজে তাঁরা যথেষ্ট আনন্দ পান বলে জানালেন শহরের ইসলামবাগ এলাকার মিনারা কাফেলা দলের সদস্য মো: নাদিম, মো: ফাহিম, মনসুর আলী ও নওয়াজরা। দিনের বেলা তাঁরা বিভিন্ন শ্রমজীবি পেশার সাথে জড়িত।
কিন্তু রাতে মিনারা কাফেলার এ দল রিকশায় মাইক বেঁধে মাইক্রোফোনে গজল শুনিয়ে ঘোরেন। ওই কাফেলা দলের বয়োজেষ্ঠ মো: নাদিম বলেন, আমি ৪৫ বছর যাবৎ কাফেলার দলে যুক্ত। প্রতিবছরই রোজাদারদের ডেকে তোলার কাজ করি। এলাকার কিছু তরুণ ও যুবক স্বেচ্ছায় রাত জাগার দলে যোগ দেয়। তাঁদের বিশ্বাস এই কাজে মানুষের দোয়া মেলে।