কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায় ফিলিপনগর ইউনিয়নে করোনা মোকাবেলায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে অনলাইন ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভয়েজ অব ফিলিপনগর’। সংগঠনটির উদ্যোগে করোনার প্রথম পর্যায়ে জরুরী রোগী পরিবহণ সেবা, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম, অনলাইনে সচেতনতামূলক পোস্ট, করোনা সম্পর্কে বিভিন্ন হালনাগাদ তথ্য প্রদান, অনলাইন জুম মিটিং ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান ছিল।
বর্তমানে বৈশ্বিক করোনা মহামারি ভয়াবহতা বিশেষ করে ইন্ডিয়ান ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রভাবে সারা দেশের ন্যায় দৌলতপুর উপজেলা রেড জোনের অন্তর্ভূক্ত। দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুহার দুইটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে এবং খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায় ভয়েজ অব ফিলিপনগর সংগঠনটি পূর্বের কার্যক্রমের সাথে জরুরী অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবার জন্য ‘ফিলিপনগর অক্সিজেন হাব’ এর মাধ্যমে ৯ টি সিলিন্ডারের সমন্বয়ে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি বিনামূল্যে পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ এবং অক্সিজেন লেভেল কম হলে সিলিন্ডার সংযুক্ত করে বিনামূল্যে রোগীকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভয়েজ অব ফিলিপনগরের চলমান কর্মসূচী সম্পর্কে সংগঠনের সভাপতি ডাঃ রাশেদুল হাসান রিপন বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সচেতনতা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এর কোন বিকল্প নেই। জনসাধারণের মধ্যে এই দায়িত্ববোধের উদয় ঘটাতে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা মূলক কর্মকান্ডে সরগরম আমাদের সংগঠন। আমাদের টেলিমেডিসিন টিমের সাথে সমন্বয় করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক টিম রোগীদের বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা কিছুক্ষেত্রে পরামর্শক্রমে হাসপাতালে নেওয়া লাগছে।
আমাদের সংগঠনের সাথে আর্থিক ভাবে ও বিভিন্ন উপকরণ (সিলিন্ডার, পালস অক্সিমিটার, সুরক্ষা সামগ্রী ইত্যাদি) সরবরাহ করে পাশে দাঁড়িয়েছেন আমাদের সুধী সমাজের অনেকেই। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।এই বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মুহাঃ আরিফ রেজা বলেন, ফিলিপনগর ইউনিয়নে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছে আমাদের সংগঠন।
জরুরী অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবার জন্য ইতিমধ্যে ৯ টি সিলিন্ডার, বিনামূল্যে অক্সিজেন লেভেল পরিমাপের জন্য ৯ টি পালস অক্সিমিটার, ৪ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক, ১০০ টি হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সরবরাহ করা হবে। করোনার ভয়াবহতা ও ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে সংগঠনটির এই ধারাবাহিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌ. এস এম মিজানুর রহমান জনি বলেন, সরকার ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ ভাবে না মানার কারণে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। সচেতনতার অভাবে তারা মাস্ক পরিধান করছে না। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে। আমরা তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য মাঠ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।
৬০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে প্রত্যন্ত ওয়ার্ডে আমাদের পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে।প্রকৃতপক্ষে জোরপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব না। এতে প্রয়োজন সামষ্টিক সহযোগিতা। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীর সেবা নিশ্চিতে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
সংগঠনের হটলাইন নাম্বারে ফোন করলেই সিলিন্ডার সহ স্বেচ্ছাসেবক টিম দ্রুত রোগীর বাসায় হাজির হচ্ছেন এবং সেবা প্রদান করছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যরা সংগঠনের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরিধান করে বিভিন্ন বাজার, মসজিদ ও ঈদগাহে মাস্ক বিতরণ করে এবং সচেতনা সৃষ্টির লক্ষে নিয়মিত মাইকিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভয়েজ অব ফিলিপনগর সংগঠনটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতি বছর মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন ও পুরস্কার প্রদান, কৃতি শিক্ষার্থী এবং কৃতি শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান, অসহায় মানুষদের সহযোগিতা সহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।