বাগমারা প্রতিনিধিঃ ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলী ব্যানার না টানানোর দায়ে বাগমারা উপজেলার মুগাইপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ আল আসাদকে শোকজ দিয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম মাহমুদুল হাসান।
গত ২৭ জুলাই ২০২১ বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব নাইমা আফরোজ ইমা সাক্ষরিত একটি চিঠি/নোটিশ জারি হয়। যার স্মারক নং – ৪০.০০. ০০০০.০১১.৩৬.০৯১.১৯.১০৬। সেখানে বলা হয়, ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪৬ তম শাহাদতবার্ষিকী ও ১৫ আগষ্টের সকল শহীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের লক্ষ্যে ১লা আগষ্ট ২০২১ থেকে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমুহ ভবনে ড্রপডাউন ( ভবনের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত) ব্যানার টানানো বা ঝুলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু উপজেলার মুগাইপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ আল আসাদ সরকারের সেই নির্দেশনাকে অবমাননা করে কোন ধরনের ব্যানার বা ফেস্টুন না টানিয়ে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করেন। এতে ঐ এলাকার জন সাধারণ ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মীরা চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদকে জানায়।
তৎক্ষনাৎ সভাপতির নির্দেশে সেখানে বাঁশের খুঁটি পুঁতে দলীয় ব্যানার টানানো হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এবং কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও জাতীয় পত্রিকাতে নির্দেশ অবমাননার সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে জেলা প্রশাসক সহ সরকারের উর্ধ্বস্তর মহলের দৃষ্টি গোচর হয়। পরবর্তীতে জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশক্রমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম মাহমুদুল হাসান ঐ শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেয় এবং কারন দর্শানোর জন্য ২৪ ঘন্টা সময় বেঁঁধে দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম মাহমুদুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, সরকার থেকে নির্দেশনা ছিল সরকারি বেসরকারি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ড্রপডাউন ব্যানার বা সাধারণ ব্যানার টানাতে হবে। অথচ মুগাইপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ আল আসাদ সেই নির্দেশনাকে অবমাননা করে তিনি কোন ব্যানারও টানান নি কোন প্রোগ্রামও করেন নি।
এতে শুধু সরকারের নির্দেশনাই অবমাননা করেননি, তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবাকে অবমাননা করেছে বলে মনে করি। তবে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোসজনক জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি যদি জবাব দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় আইনাযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এই শিক্ষকের বিষয়ে জোর আপত্তি জানিয়েছেন ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ সহ পুরো আওয়ামী পরিবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহু অপরাধ রয়েছে। তবুও কেন প্রশাসন চুপ রয়েছে আমরা জানিনা। তার বিরুদ্ধে ত্রাণের টিন চুরির অভিযোগ রয়েছে, সাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্নসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে, নারী ক্যালেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে, জমি জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে, এমনকি ৪র্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী বা ১০ বছরের শিশুকে বিয়ে করার অভিযোগও রয়েছে।
তবু এই শিক্ষক হাফিজ কিভাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে এটাই ভাবার বিষয়। কোথায় এর ক্ষমতা? অনতিলম্বে এই শিক্ষককে চাকরি থেকে অপসারন সহ গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এই বিষয়ে উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস।
এই দিন বাঙ্গলী জাতির সবচেয়ে কষ্টের দিন। বঙ্গবন্ধুর জন্যই আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র। রক্তঝরা আগষ্ট আসলে জাতির পিতার কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে তার পরিবারকে নৃশংস ভাবে হত্যার কথা। এই দিনে শেখ মুজিবকে হত্যা করেনি, হত্যা করা হয়েছে বাঙ্গালী জাতিকে।
আর এই শোক দিবসকে অবমননা মানে বঙ্গবন্ধুকে অবমননা, বাঙ্গালী জাতিকে অস্বিকার করা। এই দিবসকে পালন না করা মানে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বিকার করা। তাই বলবো এই শিক্ষক যেটা করেছে সেটা অবশ্যই ঠিক করেন নি। এই হাফিজ মাষ্টারকে চাকরিচ্যুত করা সহ দেশের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।