রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে উপজেলায় গত বোরো মৌসুমের ন্যায় আমন মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে খাদ্য অধিদফতর। কৃষকদের কাছ থেকে কিনতে পারেনি এক মুঠো ধানও। বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন কৃষকরা।
স্থানীয় হাট-বাজারে ধান বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছে তারা। সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগ্রহ দেখাননা স্থানীয় মিলাররাও। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের নেই কোন তৎপরতা। সংগ্রহ ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসেবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি ও মিলারদের অসহযোগিতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে কৃষকরা বলছে, বাজারে ধান বিক্রি জটিলতামুক্ত। সরকারি গুদাম ও বাজারের দামের পার্থক্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারী খাদ্য গুদামে আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের শুরু হয়। সংগ্রহের শেষ সময় ছিলো ১৫ মার্চ পর্যন্ত।
এ উপজেলাতে ১৯ মেট্রিকটন বিপরীতে মাত্র ৯ দশমিক ৬৯০ মেট্রিকটন আতপ এবং ১ হাজার ৯৩৩ মেট্রিকটনের বিপরীতে ২৪২ দশমিক ৩৭০ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। এসব চাল সংগ্রহের জন্য মোট ১২টি রাইস মিলের সাথে ধান ও চাল সংগ্রহের চুক্তি করা হয়। এছাড়া চলতি মৌসুমে প্রতিজনের কাছ থেকে ৩ মেট্রিকটন করে ৩৫৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ১শ’১৯জন কৃষকের তালিকা করা হয়।
কিন্তু তাদের কাছ থেকে ১ মুঠো ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনলেও স্থানীয় বাজারে প্রকারভেদে প্রতিমণ ধান ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে শুকানো, ফ্যানিং করা, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ময়েশ্চারসহ নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়।
ধান দেওয়ার পরও টাকা উঠাতে গিয়ে ধাপে ধাপে ঘুষ দিতে হয়। বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের পাঠানপাড়া গ্রামের কৃষক লাল মিয়া জানান, ধান আড়ৎদারদের নিকট ঝামেলা ছাড়াই বিক্রি করা যায়। তাই খাদ্য গুদামে ধান না দিয়ে বাজারে বিক্রি করছি। সৈয়দপুর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) ফজলুল হক বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশ ভালো থাকায় কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছে না।
ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন দামবৃদ্ধি। প্রসঙ্গত, শুধু আমন মৌসুমেই নয়, গত বোরো মৌসুমেও (২০১৯-২০২০) ধান- চাল সংগগ্রহে ব্যর্থ হয় সৈয়দপুর খাদ্য অধিদফতর। সে সময় চাল ও ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে অস্বীকার করায় কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।