দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: বর্ষা হলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুনতা । এই প্রতিকুলতার মধ্যে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার কৃষকরা জমি চাষাবাদ এবং ফসল উৎপাদন করে আসছেন। সিএস ম্যাপে উপজেলায় দেড় শতার্ধিক খর¯্রােতা খাল থাকলেও চর্চা ম্যাপে খালগুলো কৃষি খাসজমি দেখিয়ে ভুমি অফিসের একশ্রেণী অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভূমি খাদকরা বন্দোবস্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
ফলে পানি নিস্কাশনের মাধ্যম খালগুলো দিয়ে নদী কিংবা সাগরে থেকে পলিমাটি আসতে না পারায় ফসলি জমির উর্বরা শক্তি হারিয়েছে। এছাড়া ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া উৎপাদন হচ্ছে না ফসল। ভুক্তভোগী কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,এক সময় উপজেলার বুড়াগৌঁরাঙ্গ ও তেতুঁলিয়া নদী থেকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপত্তি হওয়া প্রায় দেড়শতার্ধিক খাল দিয়ে ফসলি জমিতে পলিমাটি এসে পড়তো। গ্রাম থেকে গ্রাম ছিল নৌ-যোগাযোগ।
দক্ষিানাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাউফল উপজেলার কালাইয়া বাজার ও গলাচিপার উলানিয়া বাজারে নৌকা ও ট্রলারে মালামাল পরিবহন করা হতো। কিন্তু সেই খালগুলো মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে এর চিহ্ন নেই। চলে না নৌকা, পড়ে না ফসলি জমিদে পলিমাটি। ফলে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফসল উৎপাদন করতে প্রয়োগ করতে হয় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক।
যা মানব দেহের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভূমি খাদকরা নামে বেনামে খাল বন্দোবস্ত নিয়েছে। ভরাট করে কিংবা বাধঁ দিয়ে মাছ চাষ করছে। এছাড়া অপরিকল্পিত বাধঁ ও কালভাট নির্মাণ করায় খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বর্ষা হলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আর শুকনো মৌসুমে দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট। জলাবদ্ধতা ও পানি সংকটে ফসল ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত গালর্স স্কুল সংলগ্ন আবুতারা নামক খালের ওপর ২০১৬সালে নির্মিত ব্রিজটি কালের স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই খালটি ১৪/১৫ জনে দখল করে রেখেছে। খালে দুই পাশ কেটে মাটি ভরাট করে চাষযোগ্য জমি তৈরি করেছে। অথচ এ খালটি দিয়ে আগে নৌকা চলাচল করতো। প্রায় দুই হাজার একর জমির পানি
উঠানামা করতো।
নদী থেকে পলিমাটি পড়ে জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করতো। এখন কীটনাশক ও সার ছাড়া কোন ফসল উৎপাদন হয় না। উপজেলার বাশঁবাড়িয়া ইউনিয়নের চর হোসনাবাদ গ্রামের খালটি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এ খাল দিয়ে প্রায় ৫হাজার একর ফসলি জমির পানি উঠানামা করতো। স্থানীয়রা ওই বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য মামলা দায়ের করেছে।
লক্ষীপুর গ্রামের নিবারন কবিরাজের নামের বিশাল খালটি ১০-১৫ হাত পানি থাকা অবস্থায় বন্দোবস্ত দিয়েছে ভূমি অফিস। বন্দোবস্ত প্রাপ্তরা খালটি ভরাট করে বোরো ধান চাষাবাদ করছে। এই খাল দিয়ে প্রায় ৩হাজার একর জমির পানি উঠানামা করতো। উপজেলা সদরের দক্ষিন আরজবেগী আজশুরিয়া খালটি স্থানীয় প্রভাবশালী ধর্নাঢ্য কাসেম খাঁসহ ১০/১২ জনে বন্দোবস্ত নিয়েছে।
ওই খালে শুস্ক মৌসুমে ১০/১২ হাত পানি থাকে। খালটি দখলকারীরা বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করেছে। ফলে পানি উঠানামা করতে পারে না। জলবদ্ধতায় যথাসময়ে প্রায় ১হাজার একর জমি চাষাবাদ হয় না। উপজেলার দশমিনা সদর ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষীপুর খাল, আবুতারা খাল, গাজীপুরা খাল, গয়নাঘাট খাল, পূর্ব লক্ষীপুর বাবুর খাল, আলীপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের কেয়ার খাল, ইঞ্জি নারায়ন খাল, শিংবাড়িয়া খাল,গুলবুনিয়ার খাল, রণগোপালদী ইউনিয়নের কাটাখাল, আউলিয়াপুর গ্রামের নাপ্তার খাল, তালতলার হোতা খাল স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্দোবস্ত নিয়েছে ।
এসব খাল প্রভাবশালীরা দখল করে মাটি ভরাট ও বাধঁ দিয়েছে। ফলে প্রতি বছর জলাবদ্ধতা ও পানি শূণ্যতায় নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমির ফসল। বাধঁ ও অপরিকল্পিত কালভাট নির্মাণের ফলে বুড়াগৌরাঙ্গ তেতুঁলিয়া নদী থেকে পলি মাটি আসতে পারছে না। ফলে ফসলি জমির উর্বরশক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের নিস্কাশনের খালগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, নদীর পানি উপজেলার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারায় অতিরিক্ত পানির চাপে নদীর তীরে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । ২০০৮ সালে উপজেলার শত শত কৃষক খালের অবৈধ বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবরে একার্ধিক আবেদন করেন। ওই বছরের ১৯নভেম্বর উপজেলা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে ১৬৪টি বন্দোবস্ত কেস বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের বিরদ্ধে ভূমি খাদকদের করা মামলা আদালতে বিচারধীন। এ দশমিনা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও ভুমি বন্দোবস্ত কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল কাউয়ুম জানান,খোঁজ নিয়ে জানব কতটি মামলাআছে এবং একটি খালের অভিযোগ এসেছে আগামী মিটিং
ওঠাবো।